আপনি যেভাবে দাঁত ব্রাশ করেন তা কি সঠিক?

দাঁত ব্রাশ

আমাদের দাঁত ব্রাশ করা একটি দক্ষতা যা আমরা জীবনের প্রথম দিকে শিখি। আমাদের অনেকেরই আমাদের চারপাশের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রাথমিক স্মৃতি রয়েছে যে আমরা স্কুলের আগে এবং ঘুমানোর আগে ব্রাশ করেছি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাই, এবং বাস্তবতা হল যে আমাদের বেশিরভাগই এমনভাবে দাঁত ব্রাশ করে না যা আমাদের মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্যকে অনুকূল করে তোলে।

সৌভাগ্যবশত আমাদের জন্য, এমন কিছু পদক্ষেপ রয়েছে যা আমরা এই সত্যটি সংশোধন করতে নিতে পারি। কিভাবে আমরা সবাই ভুল করে দাঁত ব্রাশ করছি তা জানতে নিচের বিষয়গুলো দেখুন:

সাধারণ ভুলসমূহ এবং সেগুলির সংশোধন

১. বেশি চাপ দিয়ে ব্রাশ করা:

• ভুল: অনেকেই যে ভুল করে তা হলো বেশি চাপ দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁত বেশি পরিষ্কার হবে।
• সঠিক পদ্ধতি: হালকা হাতে ব্রাশ করতে হবে যাতে মাড়ি ও এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

২. সঠিক সময়ের জন্য ব্রাশ না করা:

• ভুল: অনেকে মাত্র ৩০-৪৫ সেকেন্ড ব্রাশ করেন।
• সঠিক পদ্ধতি: কমপক্ষে ২ মিনিট ব্রাশ করা উচিত।

৩. ব্রাশের কোণ ঠিক না রাখা:

• ভুল: ব্রাশ সোজা করে দাঁতের উপর চেপে ধরার প্রবণতা।
• সঠিক পদ্ধতি: ব্রাশ ৪৫ ডিগ্রি কোণে ধরে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে ব্রাশ করতে হবে।

৪. ব্রাশের ধরন এবং অবস্থা:

• ভুল: দীর্ঘদিন ধরে একই টুথব্রাশ ব্যবহার করা বা শক্ত ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা।
• সঠিক পদ্ধতি: প্রতি ৩ মাস পর পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা এবং নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা।

৫. শুধুমাত্র দাঁত ব্রাশ করা:

• ভুল: শুধুমাত্র দাঁত ব্রাশ করেই মুখের সব অংশ পরিষ্কার হয়ে যায় মনে করা।
• সঠিক পদ্ধতি: জিহ্বা, মুখের ভিতরের অংশ এবং মাড়িও পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

৬. ব্রাশ করার পর কুলি করা:

• ভুল: দাঁত ব্রাশ করার পর সাথে সাথে কুলি করা।
• সঠিক পদ্ধতি: ব্রাশ করার পর কিছুক্ষণ ফ্লুরাইড টুথপেস্টের প্রভাব মুখে রাখার জন্য কুলি না করা।

৭. সঠিক সময়ে ব্রাশ না করা:

• ভুল: খাবারের পর পরই দাঁত ব্রাশ করা।
• সঠিক পদ্ধতি: খাবারের ৩০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত।

সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করার টিপস

১. প্রতিদিন দুইবার ব্রাশ করুন:

• সকালে নাশতার পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে।

২. মৃদু হাতে ব্রাশ করুন:

• মাড়ি এবং দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত না করার জন্য।

৩. ব্রাশের কোণ বজায় রাখুন:

• ৪৫ ডিগ্রি কোণে ব্রাশ করে মাড়ির কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।

৪. সার্কুলার মুভমেন্টে ব্রাশ করুন:

• উপরে নিচে বা সামনের দিকে পিছনের দিকে না করে গোলাকার ঘুর্ণন করে ব্রাশ করুন।

৫. ভাল মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করুন:

• ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করলে ভালো হয়।

৬. মুখের সব অংশ পরিষ্কার করুন:

• জিহ্বা, মাড়ি এবং মুখের ভিতরের অংশও পরিষ্কার করা জরুরি।

৭. নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে যান:

• প্রতি ৬ মাস পর পর দাঁতের চিকিৎসক দেখান।
দাঁতের যত্ন নেওয়া মানে শুধুমাত্র দাঁত ব্রাশ করা নয়, বরং সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করা। উপরের টিপসগুলো মেনে চললে আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং বিভিন্ন দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

দাঁত ব্রাশে পিতা-মাতার ভুমিকা

দাঁত ব্রাশের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করা শেখাতে পিতা-মাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এখানে কিছু প্রধান ভূমিকা এবং তাদের প্রভাব তুলে ধরা হলো:

১. প্রাথমিক শিক্ষা

ভূমিকা: শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার সাথে সাথেই পিতা-মাতা তাদের দাঁত ব্রাশ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
প্রভাব: শিশুরা শিখতে শুরু করে কীভাবে এবং কেন দাঁত ব্রাশ করা জরুরি।

২. সঠিক পদ্ধতি শেখানো

ভূমিকা: পিতা-মাতা শিশুদের সঠিকভাবে ব্রাশ করতে শেখাবেন, যেমন ৪৫ ডিগ্রি কোণে ব্রাশ ধরা এবং সার্কুলার মুভমেন্টে ব্রাশ করা।
প্রভাব: সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করার মাধ্যমে দাঁতের এনামেল এবং মাড়ি সুস্থ থাকে।

৩. প্রতিদিনের অভ্যাস গড়ে তোলা

ভূমিকা: পিতা-মাতা প্রতিদিন সকালে এবং রাতে শিশুদের দাঁত ব্রাশ করাতে উৎসাহিত করবেন।
প্রভাব: নিয়মিত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে, যা দীর্ঘমেয়াদে দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

৪. নজরদারি এবং সহায়তা

ভূমিকা: ছোট বয়সে শিশুরা সঠিকভাবে ব্রাশ করতে পারে না, তাই পিতা-মাতা তাদের সহায়তা করবেন এবং নজরদারি করবেন।
প্রভাব: শিশুরা ব্রাশের সময় কোন ভুল করছে তা শনাক্ত করে সংশোধন করতে পারে।

৫. উদাহরণ স্থাপন করা

ভূমিকা: পিতা-মাতা নিজেরা নিয়মিত এবং সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করে উদাহরণ স্থাপন করবেন।
প্রভাব: শিশুরা তাদের পিতামাতার অভ্যাস অনুকরণ করে দাঁতের যত্ন নিতে শিখে।

৬. ডেন্টিস্টের কাছে নেওয়া

ভূমিকা: পিতা-মাতা নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে শিশুদের নিয়ে যাবেন এবং তাদের দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন।
প্রভাব: দাঁতের সমস্যাগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়।

৭. মজার উপায়ে শেখানো

ভূমিকা: পিতা-মাতা শিশুদের ব্রাশ করতে উৎসাহিত করতে মজার উপায় যেমন রঙিন টুথব্রাশ, গানের মাধ্যমে ব্রাশ করা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
প্রভাব: ব্রাশ করার প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়ে এবং এটি একটি মজার অভ্যাসে পরিণত হয়।
পিতা-মাতার এই ভূমিকা শিশুদের দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সুস্থ জীবনধারা গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দাঁত ব্রাশ সম্পর্কে ১০টি প্রশ্ন ও সমাধান

প্রশ্ন ১: দাঁত ব্রাশ করার সঠিক সময় কোনটি?

সমাধান: দাঁত ব্রাশ করার সঠিক সময় হল সকালে নাশতার পরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে।

প্রশ্ন ২: দাঁত ব্রাশ করতে কতক্ষণ সময় নেওয়া উচিত?

সমাধান: কমপক্ষে ২ মিনিট সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।

প্রশ্ন ৩: কতবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত?

সমাধান: প্রতিদিন অন্তত দুইবেলা দাঁত ব্রাশ করা উচিত, সকালে এবং রাতে।

প্রশ্ন ৪: কি ধরনের টুথব্রাশ ব্যবহার করা উচিত?

সমাধান: নরম ব্রিসলের টুথব্রাশ ব্যবহার করা উচিত, যা মাড়ি এবং দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।

প্রশ্ন ৫: দাঁত ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি কী?

সমাধান: ব্রাশ ৪৫ ডিগ্রি কোণে ধরে সার্কুলার মুভমেন্টে মৃদু হাতে ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে ব্রাশ করা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৬: দাঁত ব্রাশের পর কি কুলি করা উচিত?

সমাধান: দাঁত ব্রাশ করার পর সাথে সাথে কুলি করা উচিত নয়। কিছুক্ষণ ফ্লুরাইড টুথপেস্টের প্রভাব মুখে রাখতে হবে।

প্রশ্ন ৭: ব্রাশ কত দিন পর পরিবর্তন করা উচিত?

সমাধান: প্রতি ৩ মাস পর পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত অথবা ব্রিসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করা উচিত।

প্রশ্ন ৮: খাবারের পরপরই দাঁত ব্রাশ করা উচিত কি?

সমাধান: খাবারের ৩০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। খাবারের পরপরই ব্রাশ করলে এসিডিক খাবারের কারণে এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

প্রশ্ন ৯: দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি আর কি করা উচিত?

সমাধান: দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি ফ্লস করা, মাউথওয়াশ ব্যবহার করা এবং জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত।

প্রশ্ন ১০: শিশুদের কবে থেকে দাঁত ব্রাশ করানো উচিত?

সমাধান: শিশুদের প্রথম দাঁত ওঠার সাথে সাথেই দাঁত ব্রাশ করা শুরু করা উচিত। প্রথমে নরম কাপড় বা বেবি ব্রাশ দিয়ে মৃদু করে দাঁত পরিষ্কার করা যেতে পারে।
দাঁত ব্রাশ করার এই প্রক্রিয়া এবং টিপসগুলো মেনে চললে আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং দাঁতের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

আরো পড়ুন>>